মুমিন কাকে বলে ? What is a Mumin


 মুমিন কাকে বলে ?

মুমিন শব্দের আভিধানিক অর্থ হল "বিশ্বাসী"। ইসলামী পরিভাষায়, মুমিন হল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি, তাঁর প্রেরিত কিতাব সমূহের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদিরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে এবং তার উপর আমল করে।

একজন মুমিনের কে চিনার উপায়

একজন মুমিনের কে চিনার উপায় হল তার কথা, কাজ, আচার-আচরণ এবং চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে। একজন মুমিনের মধ্যে নিম্নলিখিত গুণাবলী বিদ্যমান থাকবে:

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্য:
একজন মুমিনের মধ্যে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্য থাকবে। সে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, একত্ব এবং কর্তৃত্বের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে। সে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বদা চেষ্টা করবে।

ইসলামের মূলনীতি ও বিধানাবলীর অনুসরণ:
একজন মুমিন ইসলামের মূলনীতি ও বিধানাবলীর অনুসরণ করবে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসে রোজা রাখবে, যাকাত প্রদান করবে, হজ্জ বা ওমরাহ পালন করবে, কুরআন তেলাওয়াত করবে এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নাত অনুসরণ করবে।

অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি: 
একজন মুমিন অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতিশীল হবে। সে অন্যের কষ্ট ও দুঃখ-কষ্টে সমবেদনা জানাবে এবং তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে।

ন্যায়পরায়ণতা ও সততা: 
একজন মুমিন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ হবে। সে অন্যের সাথে ন্যায় ও ইনসাফ করবে এবং মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকবে।

ধৈর্য ও সহনশীলতা:
 একজন মুমিন ধৈর্যশীল ও সহনশীল হবে। সে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে এবং অন্যের প্রতি সহনশীল হবে।

ক্ষমাশীলতা ও দয়ালুতা: 
একজন মুমিন ক্ষমাশীল ও দয়ালু হবে। সে অন্যের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবে এবং তাদের প্রতি দয়ালু হবে।
একজন মুমিনের মধ্যে এই গুণাবলী বিদ্যমান থাকলে তাকে একজন সত্যিকারের মুমিন বলা যেতে পারে।

এছাড়াও, একজন মুমিনের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণাবলী বিদ্যমান থাকতে পারে:

আল্লাহর ভয় ও সাবধানতা:
একজন মুমিন আল্লাহর ভয় ও সাবধানতায় থাকবে। সে আল্লাহর কাছে তার সকল কাজের জবাবদিহি করতে হবে এই বিষয়ে সচেতন থাকবে।

আল্লাহর ভালোবাসা ও ভালোবাসার প্রতিদান পাওয়ার আশা: 
একজন মুমিন আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। সে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সকল ধরনের ইবাদত ও ভালো কাজ করবে।

আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত লাভের আশা:
একজন মুমিন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত লাভের আশা করবে। সে আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত লাভের জন্য সকল ধরনের নেক কাজ করবে।

পরকালের জীবনের জন্য প্রস্তুত থাকা:
 একজন মুমিন পরকালের জীবনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। সে পরকালের জীবনের জন্য ভালো কাজ করবে এবং পাপ থেকে বিরত থাকবে।

একজন মুমিনের মধ্যে এই লক্ষণাবলী বিদ্যমান থাকলে তাকে একজন পরিপূর্ণ মুমিন বলা যেতে পারে।

মুমিন বাক্তি কে নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জেনে নেই 

হাদিস ১


عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " أكمل المؤمنين إيماناً أحسنهم خلقاً " . رواه الترمذي وحسنه الألباني

অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনদের মধ্যে ঈমানের পূর্ণতা সেই ব্যক্তির যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।” (তিরমিযি, হাদিস নং: ১৯৮৭, আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

হাদিসটির ব্যাখ্যা

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের মধ্যে ঈমানের পূর্ণতার একটি মৌলিক দিক উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মুমিনদের মধ্যে ঈমানের পূর্ণতা সেই ব্যক্তির যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।

চরিত্র হলো একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। একজন মানুষের চরিত্র তার ঈমানের পরিমাপ। তাই একজন মুমিনের উচিত তার চরিত্রকে সুন্দর ও উত্তম করার জন্য চেষ্টা করা।


হাদিস ২


عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " المؤمن الذي يخالط الناس ويصبر على أذاهم خير من المؤمن الذي لا يخالط الناس ولا يصبر على أذاهم " . رواه الترمذي وحسنه الألباني

অর্থ: আবু মূসা আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি যে সমাজে বাস করে এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করে, সে সেই মুমিন ব্যক্তির চেয়ে উত্তম যে সমাজে বাস করে না এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করে না।” (তিরমিযি, হাদিস নং: ২৫১০, আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

হাদিসটির ব্যাখ্যা

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের মধ্যে ঈমানের পূর্ণতার জন্য সমাজে বাস করার গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি যে সমাজে বাস করে এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করে, সে সেই মুমিন ব্যক্তির চেয়ে উত্তম যে সমাজে বাস করে না এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করে না।

এখানে সমাজে বাস করার অর্থ হলো সমাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করা। সমাজে বাস করার ফলে মুমিন ব্যক্তির মধ্যে সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা ও ধৈর্যের গুণাবলী বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, সমাজে বাস করার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি অন্যদের সাহায্য করতে পারে এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে।


হাদিস ৩


عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " أحب الناس إلى الله تعالى أنفعهم للناس " . رواه مسلم

অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সেই ব্যক্তি যে অন্য মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।” (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৭৩)

হাদিসটির ব্যাখ্যা

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের মধ্যে ঈমানের পূর্ণতার জন্য অন্য মানুষের জন্য উপকার করার গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সেই ব্যক্তি যে অন্য মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।

অন্য মানুষের জন্য উপকার করা হলো ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একজন মুমিনের উচিত সর্বদা অন্য মানুষের জন্য উপকার করার চেষ্টা করা। অন্য মানুষের জন্য উপকার করার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তির মধ্যে সহানুভূতি, দয়া ও ভালোবাসার গুণাবলী বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, অন্য মানুষের জন্য উপকার করার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।


এই গুণাবলী বিদ্যমান থাকলে একজন মুমিনকে একজন সত্যিকারের মুমিন বলা যেতে পারে। মুমিন বাক্তি হলো সমাজের জন্য একটি আশীর্বাদ। তারা সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

মুমিন বাক্তির জীবনের লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তারা তাদের জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরিচালনা করে। তারা সর্বদা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য চেষ্টা করে।

আরও জানুনঃ
  • হাদিস কত প্রকার ও কি কি ?
  • নামাজ শিক্ষা ও নামাজের ভুল ত্রুটি ।
  • ইসলামের মুল বিষয় গুল কি কি ?
  • মুমিন হতে যে গুন গুল থাকা দরকার জেনে নিন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ