পদ কাকে বলে? পদ কয় প্রকার ও কী কী? পদান্তর কী? পদান্তরের নিয়ম কী? আসুন জেনে নেই


 পদ কাকে বলে ?

বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে, বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে। পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও অর্থবোধক যোগসূত্র সৃষ্টি করে। 

পদ পাঁচ প্রকার:

  1. বিশেষ্য পদ
  2. সর্বনাম পদ
  3. বিশেষণ পদ
  4. ক্রিয়া পদ
  5. অব্যয় পদ

বিশেষ্য পদ

যে পদ কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল, ধারণা বা প্রাণীর নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। 

যেমন:
ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য: মানুষ, রমণী, বালক, বালিকা
বস্তুবাচক বিশেষ্য: টেবিল, চেয়ার, ঘর, গাছ
স্থানবাচক বিশেষ্য: দেশ, শহর, গ্রাম, নগর 
কালবাচক বিশেষ্য: সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যে, রাত
ধারণাবাচক বিশেষ্য: জ্ঞান, বুদ্ধি, হৃদয়, মন
প্রাণীবাচক বিশেষ্য: মানুষ, পশু, পাখি, মাছ


সর্বনাম পদ

যে পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে বসে, তাকে সর্বনাম পদ বলে। 
যেমন:
ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: আমি, তুমি, সে, আমরা, তোমরা, তারা
নির্দেশক সর্বনাম: এই, সেই, ওটা, এগুলো, সেগুলো, ওগুলো
প্রশ্নবাচক সর্বনাম: কে, কী, কত, কোথায়, কখন, কেন
অব্যয়ীভাবক সর্বনাম: কতক, কিছু, অনেক, কতটা, কতক্ষণ
সম্বন্ধবাচক সর্বনাম: যে, যেন, যাতে, যেমন, যেহেতু
অনির্দেশক সর্বনাম: কেউ, কিছু, কোথাও, কখনও


বিশেষণ পদ

যে পদ বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
যেমন:
নাম বিশেষণ: সুন্দর, বড়, ভালো, খারাপ, লাল
ভাব বিশেষণ: আস্তে, ধীরে, দ্রুত, সুন্দরভাবে, ভালোভাবে
সংখ্যাবাচক বিশেষণ: এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ
পরিমাণবাচক বিশেষণ: বেশি, কম, অনেক, কিছু


ক্রিয়া পদ

যে পদ কোনো কাজ বা অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
যেমন:
সরল ক্রিয়া: খাওয়া, পড়া, লেখা, যাওয়া
যৌগিক ক্রিয়া: খেয়ে পড়া, লিখে যাওয়া, পড়ে শুয়ে পড়া
বিশেষণবাচক ক্রিয়া: ভালো লাগা, দুঃখ করা, রাগ করা
ক্রিয়াবিশেষণবাচক ক্রিয়া: আস্তে আস্তে বলা, দ্রুত দৌড়ানো

অব্যয় পদ

যে পদ কোনো বিভক্তি গ্রহণ করে না, তাকে অব্যয় পদ বলে।
যেমন:
সন্ধি অব্যয়: এবং, ও, বা, অথবা
সমাস অব্যয়: যদি, কেননা, তবুও
বিপ্রয়োগ অব্যয়: কিম্বা, নাকি, নয়তো
কারণসূচক অব্যয়: কেন, কারণ, যেহেতু
অবস্থান নির্দেশক অব্যয়: এখানে, সেখানে, ওখানে
সময় নির্দেশক অব্যয়: এখন, তখন, কাল
পরিমাণ নির্দেশক অব্যয়: খুব, বেশ, অনেক
উদ্দেশ্য নির্দেশক অব্যয়: যাতে, যেন, যাতে না

পদান্তর কী?

পদান্তর বলতে এক পদ থেকে অন্য পদে রূপান্তরকে বোঝায়। বাংলা ব্যাকরণে পাঁচ প্রকার পদ রয়েছে: বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া এবং অব্যয়। পদান্তর মূলত বিশেষ্য এবং বিশেষণ পদে হয়ে থাকে।


বিশেষ্য থেকে বিশেষণে পদান্তর

বিশেষ্য পদ থেকে বিশেষণে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ্যটির গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:

বিশেষ্য:মানুষ
বিশেষণ:মানুষিক (মানুষের মতো)
বিশেষ্য:পাহাড়
বিশেষণ:পাহাড়ি (পাহাড়ের মতো)
বিশেষ্য:চাঁদ
বিশেষণ:চন্দ্রালোকিত (চাঁদের আলোয় দীপ্ত)

বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে পদান্তর

বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষণটির প্রকৃতি, গুণ, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:

বিশেষণ:সুন্দর
বিশেষ্য:সুন্দরতা (সুন্দরের মতো)
বিশেষণ:বড়
বিশেষ্য:বৃহত্ত্ব (বড়ের মতো)
বিশেষণ:ভালো
বিশেষ্য:ভালবাসা (ভালোর মতো)

পদান্তরের উদাহরণ

বিশেষ্য থেকে বিশেষণে:
চাঁদ → চন্দ্রালোকিত
পাহাড় → পাহাড়ি
মানুষ → মানুষিক
বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে:
সুন্দর → সুন্দরতা
বড় → বৃহত্ত্ব
ভালো → ভালবাসা

পদান্তর বাক্যের অর্থকে আরও স্পষ্ট ও সুন্দর করে তোলে। এটি বাক্যের গঠনকেও সমৃদ্ধ করে।



বাংলা ব্যাকরণে পদান্তরের নিয়মগুলো হলো:

বিশেষ্য থেকে বিশেষণে পদান্তর

বিশেষ্য থেকে বিশেষণে পদান্তরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলো প্রযোজ্য:

বিশেষ্যটির শেষে "-িক", "-ীয়", "-ময়", "-পূর্ণ", "-ভাব", "-তা", "-ত্ব", "-ন", "-তাপ", "-নশীল" ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:

* **বিশেষ্য:** **মানুষ**

* **বিশেষণ:** **মানুষিক** (মানুষের মতো)

* **বিশেষ্য:** **পাহাড়**

* **বিশেষণ:** **পাহাড়ি** (পাহাড়ের মতো)

* **বিশেষ্য:** **চাঁদ**

* **বিশেষণ:** **চন্দ্রালোকিত** (চাঁদের আলোয় দীপ্ত)

বিশেষ্যটির শেষে "-তা", "-ত্ব", "-ন" ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত করার পর "-ীয়" উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:

* **বিশেষ্য:** **সুন্দর**

* **বিশেষণ:** **সুন্দরীয়** (সুন্দরের মতো)

* **বিশেষ্য:** **বড়**

* **বিশেষণ:** **বৃহত্ত্বীয়** (বড়ের মতো)

বিশেষ্যটির শেষে "-ীয়" উপসর্গ যুক্ত করার পর "-তা" বা "-ত্ব" উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:


* **বিশেষ্য:** **মানুষ**

* **বিশেষণ:** **মানুষীয়তা** (মানুষের মতো)

* **বিশেষ্য:** **পাহাড়**

* **বিশেষণ:** **পাহাড়ীয়তা** (পাহাড়ের মতো)


বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে পদান্তর

বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে পদান্তরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলো প্রযোজ্য:

বিশেষণটির শেষে "-তা", "-ত্ব", "-ন", "-তাপ", "-নশীল" ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:

* **বিশেষণ:** **সুন্দর**

* **বিশেষ্য:** **সুন্দরতা** (সুন্দরের মতো)

* **বিশেষণ:** **বড়**

* **বিশেষ্য:** **বৃহত্ত্ব** (বড়ের মতো)

* **বিশেষণ:** **ভালো**

* **বিশেষ্য:** **ভালবাসা** (ভালোর মতো)

বিশেষণটির শেষে "-ভাব" উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:

* **বিশেষণ:** **হর্ষ** (আনন্দ)

* **বিশেষ্য:** **হর্ষভাব** (আনন্দের ভাব)

* **বিশেষণ:** **দুঃখ** (দুঃখ)

* **বিশেষ্য:** **দুঃখভাব** (দুঃখের ভাব)

বিশেষণটির শেষে "-ন" উপসর্গ যুক্ত করা হয়।

উদাহরণ:

* **বিশেষণ:** **লঘু** (হালকা)

* **বিশেষ্য:** **লঘুন** (হালকা বস্তু)

* **বিশেষণ:** **মহান** (বড়)

* **বিশেষ্য:** **মহানন** (বড় বস্তু)


আরও পড়ুন ঃ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ